www.Bangla24.Top
Login - Registration - Lost Password
Homeছোট গল্পনিসুল হকের ছোট গল্প ‘তেলাপোকার গোঁফ’

নিসুল হকের ছোট গল্প ‘তেলাপোকার গোঁফ’

নিসুল হকের ছোট গল্প ‘তেলাপোকার গোঁফ’ - Bangla24.TopBangla24.Top
অনীকদের বাসায় একটা তেলাপোকা থাকে। বাথরুম হলো তেলাপোকাটার শোবার ঘর। সকালবেলা অনীকের বাবা বাথরুমে শেভ করছেন। একটা কাঁচি দিয়ে গোঁফ ছাঁটছেন। তেলাপোকাটা দেয়ালে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা লক্ষ করলো। বাবা গোসল সেরে চলে গেলেন। তেলাপোকা বাথরুমের আয়নার ওপর গিয়ে বসলো। পাখা মেলে উড়ে উড়ে আয়নায় দেখলো নিজেকে।বাহ্! আমারও তো একজোড়া গোঁফ আছে। তাহলে তো আমাকেও গোঁফগুলো ছাঁটতে হয়। দেয়ালে একটা টিকটিকি ঘোরাফেরা করছিলো। তেলাপোকা তার কাছে গিয়ে বললো, ‘কীরে টিকটিকি, চিরটা কাল তো টিকটিক করলি আর লেজ খসিয়ে গেলি। তোর গোঁফ কই?’ টিকটিকি গম্ভীর গলায় বললো, ‘ভদ্রলোকদের গোঁফ থাকে না।’ তেলোপোকা বললো, ‘মূর্খের মতো কথা বলবি না। বইটই একটু পড়। শোন, দুনিয়ায় যারা সেরা, তাদের সবার গোঁফ থাকে।’ টিকটিকি বললো, ‘সেটা কেমন?’ তেলাপোকা ডাঁট দেখিয়ে বললো, ‘ধর, পশুর রাজা কে? সিংহ। তার গোঁফ আছে। সুন্দরবনের রাজা কে? বাঘ। দি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তারও গোঁফ আছে। বাঘের মাসি কে? বিড়াল। বিড়ালেরও গোঁফ আছে। কিন্তু ভেবে দেখ, গাধার গোঁফ নেই। টিকটিকির গোঁফ নেই। টিকটিকিরে, তুই হলি ছোটো জাতের গাধা।’ টিকটিকি ব্যাপারটা ভেবে দেখলো। তাই তো! তার গোঁফ নেই। সে একটা ছোটো জাতের গাধা। তার খুব মন খারাপ হলো। মন খারাপ করে সে বললো, ‘তেলাপোকা, তুই যে নিজেকে বড়ো মনে করছিস, আমাকে ছোটো ভাবছিস, এটা ঠিক হচ্ছে না। জানিস, অহঙ্কার পতনের মূল। প্রাইড গোজ বিফোর ফল।’ তেলাপোকা গর্বের হাসি হেসে বললো, ‘যা যা, গোঁফ নেই, আর ইংরেজি ফলাচ্ছিস। পড়াশোনা আমিও অনেক করেছি। জানিস হিটলারের গোঁফ ছিলো? বল তো হিটলার কে?’ টিকটিকি বললো, ‘অতো জানি না বাপু, কিন্তু তোর ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে তুই মারা পড়বি। অতি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে ভেঙে যাবে।’ তেলাপোকা বললো, ‘টিকটিকিরে, তোর মতো ছোটো লোকের সঙ্গে কথা বলতে আমার ঘেন্না হচ্ছে। যাই, একটা কাঁচি জোগাড় করে আনি। গোঁফটা একটু সাইজ করি। আজ দেবো হিটলারি ছাঁট।’ টিকটিকি বললো, ‘কাঁচি কোথায় পাবি রে তেলাপোকা?’ তেলাপোকা পাখার ফরফর আওয়াজ তুলে বললো, ‘আমাকে পোকা বলবি না। বলবি তেলাবাঘা। আর কাঁচি কোথায় পাবো? দেখ না,কোথায় পাই।’ তেলাপোকাটা উড়ে গেলো টিকটিকির কাছে। টিকটিকির লেজে গিয়ে আঘাত করলো। টিকটিকির লেজ তো সামান্য আঘাতেই খুলে পড়ে। এই টিকটিকির লেজও খুলে মেঝেতে পড়লো। মেঝেতে পড়েও লেজটা লাফাচ্ছে। টিকটিকি ব্যথা পেয়ে বললো, ‘তেলারে তেলা, আমাকে ব্যথা দিলি। কাজটা তুই ভালো করলি না। দেখিস, তোর কপালে কতো দুঃখ আছে।’ ‘আরে যা যা!’ তেলাপোকাটা বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। গেলো পাশের ঘরে। অনীকের বাবা অফিসে চলে গেছেন। অনীক মেঝেতে বসে ছবি আঁকছে। একা একা। এই সুযোগ। তেলাপোকা অনীকের কাছে গেলো। বললো, ‘অনীক,অনীক।’ অনীক ছবি থেকে চোখ তুলে খুঁজতে লাগলো কে কথা বলে। ঘরে তো কেউ নেই! তেলাপোকা বললো, ‘অনীক, এই যে আমি কথা বলছি।’ অনীক বললো, ‘আপনি কে? আপনাকে তো দেখছি না।’ তেলাপোকা বললো, ‘এই যে আমি তেলাবাঘা। মানে তেলাপোকা। ওরফে আরশোলা।’ অনীক দেখলো, আরে তাই তো, একটা তেলাপোকা তার ছবি আঁকার কাগজের পাশে! সে-ই কথা বলছে।অনীক বললো,‘তেলাপোকা, তুমি কথা বলছো! তা বলো, কী বলতে চাও?’ তেলাপোকা বললো, ‘ইয়ে মানে, আমার একটা কাঁচি দরকার। গোঁফ ছাঁটবো। একটা কাঁচি ধার দাও না, প্লিজ।’ অনীক বললো, ‘না ভাই। আমি তো কাঁচি দিতে পারবো না। ছোটোদের কাঁচি ধরতে নেই। নিষেধ আছে। একবার বন্ধু নোহা কাঁচি ধরেছিলো। ওর হাত কেটে গিয়েছিলো। বুঝলে।’ তেলাপোকা বললো, ‘না না। তোমার কিছু হবে না। তুমি তো শুধু কাঁচিটা আমাকে দেবে। প্লিজ, দাও না প্লিজ।’ অনীক বললো, ‘বিরক্ত কোরো না তো! আমি আম্মুর কথার অবাধ্য হই না। তুমি কাঁচি পাবে না। যাও।’ তেলোপোকাটা বললো, ‘ঠিক আছে। তুমি না দিলে, তাতে কী? আমি তোমার আম্মার কাছেই যাচ্ছি।’ অনীক তাড়াতাড়ি বললো, ‘খবরদার খবরদার! ও কাজটি করো না। আম্মু তেলাপোকা খুব ভয় পায়। তোমাকে দেখলেই ভয় পেয়ে কী না কী করে বসবে।’ ‘তাই নাকি, তাহলে তো যেতেই হয়—’ তেলাপোকাটা গোঁফ নাচিয়ে বললো। ‘প্লিজ যেও না, প্লিজ আম্মুকে ভয় দেখিও না।’ অনীক হাতজোড় করলো। তেলাপোকাটা অনীকের কথায় পাত্তা দিলো না। গম্ভীর চালে যেতে লাগলো আম্মুর খোঁজে। আম্মু তখন ছিলেন রান্নাঘরে। খুঁজতে খুঁজতে পোকাটা রান্নাঘরেই গেলো। আম্মুকে দেখতে পেয়ে বললো, ‘খালাম্মা, একটা কাঁচি ধার দেন না!’ ‘কে কথা বলে?’ চমকে তাকালেন আম্মু। ‘এই যে আমি তেলাবাঘা, মানে তেলাপোকা, ওরফে আরশোলা।’ ‘তেলাপোকা!’আম্মু তাকিয়ে দেখলেন সত্যি একটা তেলাপোকা। ছি ছি। ও মারে! ও বাবারে! আম্মুর সমস্ত গা রিরি করে উঠলো। আম্মু চিৎকার করলেন। সবকিছু ওলটপালট করে দৌড়ে পালিয়ে এলেন রান্নাঘর থেকে। তেলাপোকাটা বেশ বিজয়ের হাসি হাসলো। বললো, ‘নাহ্, অনীকের বাবার কাছেই কাঁচিটা চাইতে হবে।’ বিকেলবেলা অনীকের বাবা এলেন অফিস থেকে। তেলাপোকাটা তার কাছে গেলো। বললো, ‘খালুজান, একটা কাঁচির জন্যে বড়ো হয়রান হয়ে গেলাম। আপনার কাঁচিটা একটু ধার দেন না, প্লিজ।’ অনীকের বাবা তেলাপোকাটার দিকে তাকালেন। কী সর্বনাশ! ঘরের মধ্যে তেলাপোকা! একটা তেলাপোকা মানে হাজার হাজার জীবাণু। কতো অসুখবিসুখ যে ছড়ায় এই নোংরা প্রাণীটা! তিনি তাড়াতাড়ি বের করলেন তেলাপোকা মারার ওষুধ। ছুড়ে মারলেন তেলাপোকাটার গায়ে। ‘আরে আরে করেন কী?’ তেলাপোকাটা দৌড়াতে লাগলো বাথরুমের দিকে। ততোক্ষণে ওষুধ তার গায়ে লেগে গেছে। বাথরুমে গিয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়লো। টিকটিকি বললো, ‘কীরে তেলা, এখন তোর কী হলো! বললাম অহঙ্কার করিস না, মারা পড়বি। এখন হলো তো! মর। আমার লেজ খসিয়েছিলি, তার ফল ভোগ কর।’ তেলাপোকাটা ছটফট করতে করতে মরে গেলো। তখন পিঁপড়েরা এলো লাইন ধরে। তেলাপোকার লাশটা তারা নিয়ে যাবে তাদের ঘরে। পিঁপড়ারা গান ধরলো : তেলাপোকা তেলাপোকা বোকাসোকা বোকাসোকা করেছিল গর্ব ভাবে নাই মরবো অবশেষে মৃত্যু তাকে দিই ধিক থু! টিকটিকিটা বলে উঠলো : টিক্ টিক্ টিক্ ঠিক ঠিক ঠিক।

Related Posts

Categories #9

খবরাখবর(820)
ছোট গল্প(68)
শিক্ষামূলক গল্প(67)
গল্পকথার আসর(59)
ভৌতিক গল্প(56)
ইসলামিক গল্প(44)
রম্য গল্প(21)
কিশোর গল্প(12)
চটি গল্প(1)