www.Bangla24.Top
Login - Registration - Lost Password
Homeগল্পকথার আসরপৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China)

পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China)

পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China) - Bangla24.TopBangla24.Top
চীনের মহাপ্রাচীর বা গ্রেট ওয়াল অব চায়না (The Great Wall of China) পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শনগুলোর একটি এবং এটি চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষার জন্য নির্মিত একটি বিশাল প্রাচীর। এটি পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম এবং এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৬৯৫ কিমি। প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় ৪.৫৭ থেকে ৯.২ মিটার বা ১৫ থেকে ৩০ ফুট, এবং প্রস্থ প্রায় ৯.৭৫ মিটার বা ৩২ ফুট। কথিত আছে, প্রাচীরের উপর দিয়ে একসাথে ১২ জোড়া ঘোড়া চলতে পারতো। চীনের মহাপ্রাচীরের ইতিহাস: চীনের মহাপ্রাচীর নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে, এবং তা চলতে থাকে খ্রিস্টীয় ১৬শ শতক পর্যন্ত। প্রাচীরের মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনের উত্তর সীমান্তকে দস্যু ও যাযাবর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২২১ সালে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং নিজ সম্রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন প্রাচীরকে একত্রিত করতে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এটি মূলত ইট, পাথর এবং মাটির সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। প্রাচীরের বর্তমান অবস্থা মূলত মিং রাজবংশের সময়ের নির্মাণের ওপর ভিত্তি করে। যদিও প্রাচীরের অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে মূল প্রাচীরের কিছু অংশ এখনও সংরক্ষিত আছে। চীনের মহাপ্রাচীর তৈরির উদ্দ্যেশ্য ও ইতিহাস: ইতিহাস হতে যানাযায় সে সময় মাঞ্চুরিয়া আর মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুরা চিনের বিভিন্ন অংশে আক্রমন করতো এবং বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করতো ফলে দস্যুদের হাত থেকে চীনকে রক্ষা করার জন্য এই প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল। ২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীন বিভিন্ন খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এদের মধ্যে একজন রাজা যার নাম ছিল ষি হুয়াং-টি, তিনি অন্যান্য রাজাদের সংঘবদ্ধ করে নিজে সম্রাট হন। চীনের উত্তরে গোবি মরুভূমির পূর্বে দুর্ধর্ষ মঙ্গলিয়দের বাস, যাদের কাজই হলো লুটতরাজ করা। এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য সম্রাটের আদেশে চীনের প্রাচীর তৈরির কাজ আরম্ভ হয়। প্রাচীর তৈরি হয়েছিল চিহলি-পুরোনো নাম পোহাই উপসাগরের কূলে শানসীকুয়ান থেকে কানসু প্রদেশের চিয়াকুমান পর্যন্ত। সম্রাটের উদ্দেশ্য কি সিদ্ধ হয়েছিল? এই প্রশ্ন থেকেই যায়। অনেক জায়গা প্রায়ই ভেঙে পড়ত অথবা মঙ্গোল দস্যুরা ভেঙে ফেলে চীনের মূল ভূখণ্ডে লুটপাট করার জন্য ঢুকে পড়ত। বর্তমানে প্রাচীর ঐতিহ্য বলে রক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও প্রাচীরের অনেক জায়গা এখনও কিছু কিছু ভাঙা রয়েছে। এর মূল অংশের নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালের দিকে। চীনের মহাপ্রাচীর নির্মাণ ও স্থাপত্য: প্রাচীরের নির্মাণে ব্যবহার করা হয় ইট, পাথর এবং মাটি। প্রাচীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পাহাড় ও উঁচু স্থানগুলিতে সংকেত টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে, যা সেনাদের অস্ত্র ও সংকেত পাঠাতে সহায়তা করত। এছাড়াও সেনা ঘাঁটি ও প্রশাসনিক কেন্দ্র দীর্ঘ ব্যবধানের পরপর স্থাপন করা হয়েছিল। প্রাচীরের এই স্থাপনাগুলো শত্রুর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, সেনাদের যোগাযোগ, অস্ত্র সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রাচীরের প্রকৌশল বৈশিষ্ট্য: চীনের প্রাচীর একটি প্রকৌশল বিস্ময়। এটি পাহাড়ি ঢাল বেয়ে উঠে গেছে, আবার মরুভূমির বালিয়াড়ি পার করেছে। এর উচ্চতা গড়ে ৭–৮ মিটার, কিছু জায়গায় ১৪ মিটার পর্যন্ত। প্রাচীরের উপরে প্রায় ৫ মিটার প্রশস্ত রাস্তা আছে, যেখানে ঘোড়া ও সৈন্য চলাচল করত। প্রতি কয়েকশ মিটার পরপর পাহারা টাওয়ার, খাবার সংরক্ষণের ঘর, ও সৈন্যদের বিশ্রামাগার ছিল। দূরে দূরে সংকেত টাওয়ার বসানো ছিল, যেখানে ধোঁয়া বা আগুনের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হতো। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় পর্যন্ত এই সংকেত কয়েক মিনিটেই ছড়িয়ে পড়ত। সামাজিক ও মানবিক মূল্য: চীনের প্রাচীর শুধু সামরিক প্রকল্প ছিল না, বরং এটি চীনা সমাজে এক বিশাল মানবিক কাহিনি। অসংখ্য শ্রমিকের রক্ত, ঘাম ও ত্যাগ এতে মিশে আছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, “প্রাচীরের প্রতিটি ইটের নিচে এক শ্রমিকের আত্মা ঘুমিয়ে আছে।” তবে একই সঙ্গে এটি চীনের ঐক্যের প্রতীক একটি জাতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে পরিশ্রম, জ্ঞান ও স্থিরতা দেখিয়েছে, তারই নিদর্শন। চীনের মহাপ্রাচীরের বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে চীনের প্রাচীরের অনেক অংশ ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত, তবে কিছু অংশ এখনও ভাঙা আছে। বেইজিংয়ের উত্তরে এবং পর্যটন কেন্দ্রের কিছু অংশ সংরক্ষণ এমনকি পুনঃনির্মাণ করা হলেও দেয়ালের বেশ কিছু অংশ ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো গ্রাম্য খেলার মাঠ এবং বাড়ি ও রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের উত্স হিসেবে ব্যবহূত হয়। দেয়ালের কিছু অংশ নাশকতার জন্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেয়াল পুনঃনির্মাণের জন্য কিছু অংশ ধ্বংস করা হয়েছে। উন্নত পর্যটন এলাকার কাছে মেরামতকৃত অংশ পর্যটন পণ্যের বিক্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। দেয়ালটিতে নিয়মিত বিরতিতে পর্যবেক্ষণ চৌকি আছে, যা অস্ত্র সংরক্ষণ, সেনাবাহিনীর আবাসন এবং স্মোক সংকেত প্রদানে কাজে লাগত। সেনাঘাঁটি এবং প্রশাসনিক কেন্দ্রসমূহ দীর্ঘ বিরতিতে অবস্থিত। গ্রেট ওয়ালের সীমানার মধ্যে সেনা ইউনিটগুলোর যোগাযোগ যেমন—দলকে শক্তিশালী করা এবং শত্রুদের আন্দোলন সম্পর্কে সাবধান থাকা ছিল উল্লেখযোগ্য। দেখার সুবিধার জন্য পাহাড়সহ অন্যান্য উঁচুস্থানে সংকেত টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছিল।

Related Posts

Categories #9

খবরাখবর(820)
ছোট গল্প(68)
শিক্ষামূলক গল্প(67)
গল্পকথার আসর(59)
ভৌতিক গল্প(56)
ইসলামিক গল্প(44)
রম্য গল্প(21)
কিশোর গল্প(12)
চটি গল্প(1)