www.Bangla24.Top
Login - Registration - Lost Password
Homeশিক্ষামূলক গল্পশিক্ষামূলক গল্প: শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক

শিক্ষামূলক গল্প: শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক

শিক্ষামূলক গল্প: শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক - Bangla24.TopBangla24.Top
একটি ছোট্ট গ্রামের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলটি ছিল যেন একখণ্ড শান্তির নীড়। কুঁড়েঘরের মতো দেখতে স্কুল ভবনটি ছিল খুবই সাধারণ। সেখানে পড়াতেন একজন সম্মানিত শিক্ষক, নাম মণীন্দ্র স্যার। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল ব্যতিক্রমী এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী। সবার কাছে তিনি ছিলেন এক আদর্শ শিক্ষক। স্কুলে অনেক ছাত্রছাত্রী থাকলেও এক ছাত্র ছিল, যার নাম ছিল শুভ। শুভ ছিল অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। সে খুব মেধাবী ছিল, কিন্তু তার পড়াশোনায় অনিয়ম ছিল লক্ষণীয়। একদিকে পড়াশোনার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ, অন্যদিকে অলসতা ও নিজের প্রতি একধরনের অবিশ্বাস। শুভর মা-বাবা ছিলেন কৃষক। তারা চেয়েছিলেন তাদের সন্তান একদিন অনেক বড় হবে। কিন্তু শুভর স্বভাব তাদের উদ্বিগ্ন করত। একদিন মণীন্দ্র স্যার শুভকে ডেকে বললেন, “শুভ, তুমি জানো, প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু না কিছু লক্ষ্য থাকা দরকার। তুমি কি জানো তোমার লক্ষ্য কী?” শুভ মাথা নিচু করে বলল, “স্যার, আমি জানি না। আমার কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় আমি কিছু করতে পারব না।” মণীন্দ্র স্যার মৃদু হেসে বললেন, এটা ঠিক নয়, শুভ। তুমি নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছ। কিন্তু আমি জানি, তোমার মধ্যে অসম্ভব শক্তি লুকিয়ে আছে। আমি তোমাকে একটি গল্প বলি। শিক্ষক তাঁর কথা শুরু করলেন, “একটি ছোট্ট পাখি ছিল, যে ভাবত সে কখনোই উড়তে পারবে না। সে সারাদিন বসে বসে অন্য পাখিদের উড়তে দেখত। একদিন তার মা বলল, ‘তুমি যদি একবার ডানা মেলে চেষ্টা কর, তবে তুমি উড়তে পারবে।’ প্রথমে সে ভয় পেয়েছিল, কিন্তু পরে সে সাহস করে ডানা মেলল। তখন সে বুঝল, তার মধ্যে উড়ার শক্তি বরাবরই ছিল, শুধু চেষ্টা করাই বাকি ছিল।” গল্পটি শোনার পর শুভ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। সে বুঝতে পারল, মণীন্দ্র স্যার আসলে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর শুভ তার জীবনে নতুন করে শুরু করার সংকল্প করল। সে ঠিক করল, প্রতিদিন পড়াশোনায় মনোযোগ দেবে এবং কোনো বিষয়ে পিছিয়ে পড়লে স্যারকে জিজ্ঞাসা করবে। শিক্ষকও শুভর পরিবর্তন দেখে উৎসাহিত হলেন। তিনি শুভর জন্য আলাদা সময় বের করতেন এবং তার দুর্বল বিষয়গুলোতে বাড়তি মনোযোগ দিতেন। শুভ ধীরে ধীরে তার অলসতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করল। পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে এল। শুভ তার নিজের ওপর ভরসা রেখে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিল। মণীন্দ্র স্যার তাকে বলেছিলেন, “শুভ, পরীক্ষার ফলাফল যেমনই হোক, মনে রেখো, চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করলে একদিন তুমি সফল হবেই।” পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন শুভর নাম মেধাতালিকার শীর্ষে ছিল। শুভ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। তার মা-বাবার চোখে আনন্দাশ্রু, আর মণীন্দ্র স্যারের মুখে এক তৃপ্তির হাসি। শুভ সেই দিনই বুঝতে পারল, জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে নিজের প্রতি বিশ্বাস আর অক্লান্ত পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি। মণীন্দ্র স্যার শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক, যিনি ছাত্রদের জীবনে আলো জ্বালানোর কাজ করতেন। শুভ তার সাফল্যের জন্য স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ ছিল। পরবর্তীকালে শুভ নিজেও একজন শিক্ষক হল এবং মণীন্দ্র স্যারের মতোই নিজের ছাত্রদের জীবন গড়ার দায়িত্ব নিল। এভাবেই এক শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক শুধু শ্রেণিকক্ষেই সীমাবদ্ধ থাকল না; তা রূপ নিল এক মহৎ শিক্ষার আদর্শে, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে যাবে।

Related Posts

Categories #9

খবরাখবর(820)
ছোট গল্প(68)
শিক্ষামূলক গল্প(67)
গল্পকথার আসর(59)
ভৌতিক গল্প(56)
ইসলামিক গল্প(44)
রম্য গল্প(21)
কিশোর গল্প(12)
চটি গল্প(1)