www.Bangla24.Top
Login - Registration - Lost Password
Homeগল্পকথার আসরজেনে নিন বিশ্বের সাতটি আশ্চর্য জিনিস সম্পর্কে কিছু কথা

জেনে নিন বিশ্বের সাতটি আশ্চর্য জিনিস সম্পর্কে কিছু কথা

Download Bangla.Top Android App
জেনে নিন বিশ্বের সাতটি আশ্চর্য জিনিস সম্পর্কে কিছু কথা - Bangla24.Top425
পৃথিবীর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বিস্ময়কর স্থাপনার মধ্য থেকে সুইস সংস্থা “নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন – New7Wonders Foundation” বিশ্বের মানুষের ভোটে নির্বাচন করে পৃথিবীর নতুন সাত আশ্চর্য। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলা এই বিশাল ভোটাভুটিতে ২০০টির মতো বৈশ্বিক নিদর্শনের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয় সাতটি স্থাপনা। এগুলোর সৌন্দর্য, ইতিহাস ও স্থাপত্যকলা আজও বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করে। আজকে চলুন আমরা জেনে নিই পৃথিবীর সাত আশ্চর্য হিসেবে বিখ্যাত এসব স্থাপনা নির্মাণের পেছনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China), চীন গ্রেট ওয়াল অফ চায়না বা চীনের প্রাচীর হল এক সুবিশাল মানুষের তৈরী প্রাচীর যেটি ইঁট, পাথর, কাঠ ও অন্যান্য পদার্থ দিয়ে নির্মিত। গ্রেট ওয়্যাল অফ চায়নার দৈর্ঘ্য হল ২১,১৯৬.১৮ কিলোমিটার (১৩,১৭০.৬৯ মাইল)। চীনের বিশাল প্রাচীরটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণকারীদের দূরে রাখা এবং সামরিক অনুপ্রবেশকারীদের আটকানো। এখন এটি চীনবাসীদের নিকট শ্রদ্ধাস্বরূপ, যাঁরা এই প্রাচীরটির নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। এই প্রাচীরটি (পূর্বদিকের) হেবেই প্রদেশের শানহাইগুয়ান থেকে (পশ্চিমদিকে) গানসু প্রদেশের জিয়াউগুয়ান প্রদেশ পর্যন্ত চলে গেছে। এটি প্রাচীর, অস্ত্রাগার, সৈন্যনিবাস, আস্তাবল, প্রাচীরের ওপর আশ্রয়স্থল, দূরবীক্ষণ স্তম্ভ, ঘোড়ার গমনপথ, দূর্গ এবং গিরিপথের সমন্বয়ে গঠিত। মিং রাজবংশের সময় প্রায় ২০০ বছর এই প্রাচীরটি নির্মানের কাজ চলে, তার আগেও বহু বছর লেগেছিল এই প্রাচীরটি নির্মানে। এই প্রকচিরটি নির্মাণের প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি লোক লেগেছিল। সাধারণ মানুষ, শ্রমিক এবং সৈন্যরা এই নির্মানে অংশোগ্রহন করে। উপাদান হিসেবে ব্যাবহিত হয় মাটি, পাথর, কাঠ, ইট, বলি। এই প্রাচীরটিতে অনেক গুলি ওয়াচ টাওয়ার আছে যার মধ্যে ৭২৩ টি বীকন টাওয়ার, ৭০৬২ টি লুকানো টাওয়ার এবং ৩৩৫৭ টি ওয়াল প্লাটফর্ম রয়েছে। যেখান থেকে সৈন্যরা শত্রু পক্ষের উপর নজরদারি করতো। ২০০৭ সালে এই প্রাচীর বিশ্বের নতুন সাত আশ্চর্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। পেত্রা (Petra) – জর্ডান পেত্রা হলো একটি পুরোনো শহর যা পুরো পাহাড় কেটে বানানো। পাথরগুলোর রঙ গোলাপি হওয়ায় একে বলা হয় “রোজ সিটি”। অনেক, অনেক বছর আগে নাবাতীয় নামে এক জাতি এখানে রাজত্ব করত। তারা পাহাড়কে কেটে ঘর, মন্দির, হলঘর সবকিছু বানিয়েছিল। আজও মানুষ অবাক হয়ে দেখে কীভাবে কোনো আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই এত সুন্দর শহর তৈরি করা হয়েছিল! পেত্রা পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় প্রত্নস্থানের একটি। এটি বর্তমানে জর্দানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি গ্রাম ‘ওয়াদি মুসা’ র ঠিক পূর্বে ‘হুর’ পাহাড়ের পদতলে অবস্থিত। পেত্রা প্রায় ২৬৪ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত, উচ্চতা প্রায় ৮১০ মিটার। ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বব্দ পর্যন্ত এটি গাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী ছিলো। পেত্রা নামটি একটি গ্রিক শব্দ ‘petros’ থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। যার অর্থ পাথর। পাথরের তৈরী বলে এমন নামকরন করা হয়েছে। একসময় এই নগরীটি অত্যন্ত সুন্দর ও সুরক্ষিত একটি দুর্গ ছিল। পাথরের গায়ে খোদাই করে এই নগরটি নিপুল ভাবে তৈরী হয়েছিল। নগরটির চারপাশে পাহাড়ে অনেক ঝর্নাও ছিল। পেত্রা র মূল শহরের একটিই প্রবেশদ্বার যেটির নাম ‘হার্ডিয়েন ফটক’। বর্তমানে সেগুলি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ধংস হয়ে গেছে। পেত্রা র মূল আকর্ষন হল ‘খাজানাতে ফেরাউন’ মন্দির। ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার (Christ the Redeemer) – ব্রাজিল এটি হলো যিশুর একটি বিশাল মূর্তি, যা ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরের একটি উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মূর্তিটি এত উঁচু যে দূর থেকে পুরো শহরেই দেখা যায়। দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ানো যিশুর এই মূর্তি শান্তি, ভালোবাসা আর ক্ষমার প্রতীক। ১৯২২ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর ধরে এটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক এখানে আসে সুন্দর দৃশ্য আর বিশাল মূর্তিটি দেখতে। যেই পাহাড়টিতে মূর্তিটি রয়েছে সেটির উচ্চতা প্রায় ৭১৩ মিটার বা ২৩৪০ ফুট। ১৯২১ সালে এই মূর্তিটি তৈরীর কাজ শুরুকরা হয়। এই মূর্তিটির প্রধান নির্মাতা ভাস্কর পল ল্যান্ডোস্কি। ১৯৩১ সালে এটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়। সম্পূর্ণ গ্রানাইট দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল এই মূর্তিটি, এবং মূর্তিটির উচ্চতা ৩০ মিটার বা ১০০ ফুট। পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের শতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্দেশ্যে ৭ই জুলাই ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সাত আশ্চর্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়। এবং এক একটি হাতের দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার বা ৯২ ফুট। ‘সোয়াপষ্টোন’। মাচু পিচু (Machu Picchu) – পেরু মাচু পিচু হলো ইনকা সভ্যতার একটি প্রাচীন শহর, যা খুব উঁচু পাহাড়ে লুকিয়ে আছে। অনেক দিন কেউ এই শহরকে চিনত না। ১৯১১ সালে এক অভিযাত্রী সেটি আবার খুঁজে পান। শহরটি পাথর দিয়ে এত নিখুঁতভাবে বানানো যে আজও মানুষ ভাবতে পারে না কীভাবে পাহাড়ের চূড়ায় এত সুন্দর শহর গড়া হয়েছিল। এখানে রয়েছে রাজাদের বাড়ি, মন্দির, সূর্য দেখার বিশেষ স্থান এবং ধাপ ধাপ চাষের ক্ষেত। এটিকে বলা হয় “হারানো নগরী”। এই শহরটি ১৪৫০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। এই শহরটি নির্মাণের ১০০ বছরের মধ্যেই এটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। ইনকা সভ্যতা স্পেন দ্বারা আক্রান্ত হবার কারনে এটি ধ্বংস হয়। তারপর কয়েকশ বছর এই শহরটি অজ্ঞাত অবস্থায় থাকে। এরপর ১৯১১ সালে এক মার্কিন ঐতিহাসিক এই শহরটির খোজে বের করেন এবং এটিকে বিশ্বের নজরে তুলে ধরেন। তারপর থেকে মাচুপিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এই মাচুপিচুকে বিশ্ব ঐতিয‍্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এবং ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সাত আশ্চর্যের মধ্যে নীতিভুক্ত করা হয়। চিকেন ইৎজা (Chichen Itza) – মেক্সিকো চিকেন ইৎজা হলো মায়া সভ্যতার তৈরি একটি বিখ্যাত শহর। এখানে সবচেয়ে পরিচিত ভবন হলো “এল কাস্তিয়ো”, যেটি দেখতে পিরামিডের মতো। মায়া মানুষরা জ্যোতির্বিদ্যায় খুব পারদর্শী ছিল। তারা সূর্য, চাঁদ আর নক্ষত্র দেখে সময় হিসাব করত। এই পিরামিডও তারা অ্যাস্ট্রনমির হিসাব অনুযায়ী তৈরি করেছিল। ৯ম এবং ১২শ শতাব্দীর মধ্যে চিচেন ইতজা মায়া সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র ছিল। এটি আশেপাশের অঞ্চলের জন্য একটি বাণিজ্য কেন্দ্র, ধর্মীয় স্থান এবং রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করেছিল। সাইটটিতে স্থাপত্য শৈলীর মিশ্রণ রয়েছে, যা মায়া এবং টলটেক উভয় সংস্কৃতির প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। দ্য টেম্পল অফ দ্য ওয়ারিয়র্স, গ্রেট বলকোর্ট, ক্যারাকল অবজারভেটরি এবং সেনোট সাগ্রাডো (পবিত্র সেনোট) চিচেন ইতজাতে পাওয়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলির মধ্যে রয়েছে। ১৮০০ সালে চিচেন ইতজা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়। ১৯৮৮ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গৃতীত হয়। ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চাযের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রোমান কলোসিয়াম (Colosseum) – ইতালি ইতালির রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত নির্দশন হলো কলোসিয়াম। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা স্তম্ভগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এতে রয়েছে রোমান প্রকৌশলের চোখধাঁধানো নৈপুণ্য। নিষ্ঠুর সম্রাট টাইটাসের তত্ত্বাবধানে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ইমারতটি মঞ্চনাটক, গ্লাডিয়েটরদের লড়াই, জীবজন্তুর লড়াই ও বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য ব্যবহার করা হতো। ৭০ থেকে ৭২ খ্রিস্টাব্দের মাসে কোনো এক সময় এটি নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছিল। ৮০ খিস্টাব্দে সম্রাট তিতুসের রাজত্ব কালে এটি সম্পন্ন হয় কলোসিয়াম-এর উচ্চতা ৪৮ মিটার, দৈর্ঘ্য ১৮৮মিটার এবং চওড়া ১৫৬ মিটার। আর প্রত্যেক তলায় ৮০টি করে তিনটি লেভেলে মোট ২৪০টি আর্চ আছে। ইউনেস্কো ১৯৯০ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলের স্বীকৃতি দেয়। ২০০৭ সালে একে বিশ্বের সপ্তমশ্চর্যের মধ্যে একটি বলে নির্বাচিত করা হয়। তাজমহল (Taj Mahal) – ভারত তাজমহল হলো বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সাদা মার্বেলের প্রাসাদ। সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয় স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে এটি তৈরি করেছিলেন। তাজমহল বানাতে প্রায় ২২ বছর সময় লেগেছিল এবং প্রায় ২০ হাজার কারিগর দিন-রাত কাজ করেছিলেন। এটি দেখতে গল্পের রাজপ্রাসাদের মতো। তাজমহলকে বলা হয় প্রেমের প্রতীক। প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষের বেশি মানুষ এটি পরিদর্শন করতে যায়। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজমহলকে বিশ্ব ঐতিয‍্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকা ভুক্ত করে। এবং ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সাত আশ্চর্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়।

Related Posts

Categories #9

খবরাখবর(902)
ছোট গল্প(68)
শিক্ষামূলক গল্প(67)
গল্পকথার আসর(59)
ভৌতিক গল্প(57)
ইসলামিক গল্প(44)
কিশোর গল্প(32)
রম্য গল্প(21)
চটি গল্প(1)