www.Bangla24.Top
Login - Registration - Lost Password
Homeছোট গল্পবোকা বাঘ

বোকা বাঘ

Download Bangla.Top Android App
বোকা বাঘ - Bangla24.Top131
এক রাজার বাড়ির কাছে এক শিয়াল থাকত। রাজার ছাগলের ঘরের পিছনে তার গর্ত ছিল। রাজার ছাগলগুলি খুব সুন্দর আর মোটা মোটা ছিল। তাদের দেখলেই শিয়ালের ভারী খেতে ইচ্ছে হত। কিন্তু রাজার রাখাল গুলির ভয়ে তাদের কাছে আসতে পারত না। তখন শিয়াল তার গর্তের ভিতর থেকে খুঁড়তে আরম্ভ করল। খুঁড়ে-খুঁড়ে তো সে ছাগলের ঘরে এসে উপস্থিত হল, কিন্তু তবুও ছাগল খেতে পেল না। রাখালের দল তখন সেখানে বসে ছিল। তারা শিয়ালকে দেখতে পেয়েই ধরে বেঁধে ফেলল। তারপর তাকে খোঁটায় বেঁধে রেখে তারা চলে গেল। যাবার সময় বলে গেল, ‘কাল এটাকে নিয়ে সকলকে তামাশা দেখাব, তারপর মারব। আজ রাত হয়ে গেছে।’ রাখালেরা চলে গেছে, শিয়াল মাথা হেঁট করে বসে আছে, এমন সময় এক বাঘ সেইখান দিয়ে যাচ্ছে। শিয়ালকে দেখে বাঘ ভারী আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘কি ভাগ্নে, এখানে বসে কি করছ?’ শিয়াল বললে, ‘বিয়ে করছি।’ বাঘ বললে, ‘তবে কনে কোথায়? লোকজন কোথায়?’ শিয়াল বললে, ‘কনে তো রাজার মেয়ে। লোকজন তাকে আনতে গেছে।’ বাঘ বললে, ‘তুমি বাঁধা কেন?’ শিয়াল বললে, ‘আমি কিনা বিয়ে করতে চাইনি, তাই আমাকে বেঁধে রেখে গেছে, পাছে আমি পালাই।’ বাঘ বললে, ‘সত্যি নাকি। তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছ না?’ শিয়াল বললে, ‘সত্যি মামা। আমার বিয়ে করতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না।’ তা শুনে বাঘ ভারী ব্যস্ত হযে বললে, ‘তবে তোমার জায়গায় আমাকে বেঁধে রেখে তুমি চলে যাও না।’ শিয়াল বললে, ‘এক্ষুণি। তুমি আমার বাঁধন খুলে দাও, তারপর আমি তোমাকে বেঁধে রেখে যাচ্ছি।’ তখন বাঘের আনন্দ দেখে কে। সে অমনি এসে শিয়ালের বাঁধন খুলে দিল। শিয়ালও আর দেরি না করে, তাকে ভালো মতো খোঁটায় বেঁধে বললে ‘এক কথা মামা। তোমার শালারা এসে তোমার সঙ্গে হাসি-তামাশা করবে। তাতে বা তুমি চটো?’ বাঘ বললে, ‘আরে না। আমি তাতে চটি? আমি বুঝি এতই বোকা।’ এ কথায় শিয়াল হাসতে হাসতে চলে গেল। বাঘ ভাবতে লাগল, কখন কনে নিয়ে আসবে। সকালবেলায় রাখালের দল এসে উপস্থিত হল। বাঘ তাদের দেখে ভাবল, ‘এই আমার শালারা এসেছে। এক্ষুণি হয়তো ঠাট্টা করবে। আর তাহলে আমাকেও খুব হাসতে হবে।’ রাখালেরা এসেছিল শিয়াল মারতে। এসে দেখলে বাঘ বসে আছে। অমনি তো ভারী একটা হইচই পড়ে গেল। কেউ-কেউ পালাতে চায়, কেউ-কেউ তাদের থামিয়ে বললে, ‘আরে বাঁধা রয়েছে দেখছিস না? ভয় কি? কুড়ুল, খন্তা, বল্লম নিয়ে আয়।’ তখন একজন একটা মস্ত ইট এনে বাঘের গায়ে ছুঁড়ে মারল। তাতে বাঘ বললে, ‘হাঃ, হাঃ, হাহা হাহা।’ আর একজন একটা বাঁশ দিয়ে গুঁতো মারলে। তাতে বাঘ বললে, ‘হী, হীঃ, হিহি, হিহি।’ আর একজন একটা বল্লম দিয়ে খোঁচা মারলে। তাতে বাঘ বললে, ‘উঃ, হূঃ, হূঃ, হোহো হোহো হোহো! বুঝেছি তোমরা আমার শালা।’ আবার তারা বল্লমের খোঁচা মারলে। তাতে বাঘ বেজায় রেগে বললে, ‘দুত্তোর! এমন ছাই বিয়ে আমি করব না।’ বলে সে দড়ি ছিঁড়ে বনে চলে গেল। বনের ভিতরে এক জায়গায় করাতীরা করাত দিয়ে কাঠ চিরত। একটা মস্ত কাঠ আধখানা চিরে রেখে, সেইখানে গোঁজ মেরে করাতীরা চলে গিয়েছে। এই সময় বাঘ বনের ভিতর এসে দেখে শিয়াল সেই আধচেরা কাঠখানার উপরে বসে বিশ্রাম করছে। শিয়াল তাকে দেখেই বললে, ‘কি মামা, বিয়ে কেমন হল?’ বাঘ বললে, ‘না ভাগ্নে, ওরা বড্ড বেশী ঠাট্টা করে। তাই আমি চলে এসেছি।’ শিয়াল বললে, ‘তা বেশ করেছ। এখন এস, দুজনে বসে গল্প-সল্প করি।’ বলতেই বাঘ লাফিয়ে কাঠের উপরে উঠেছে, আর বসেছে ঠিক যেখানটায় কাঠটা খুব হাঁ করে আছে, সেইখানে। তার লেজটা সেই ফাঁকের ভিতর ঢুকে ঝুলে রয়েছে। শিয়াল দেখলে যে, এবারে কাঠ থেকে গোঁজটি খুলে নিলেই বেশ তামাশা হবে। সে বাঘকে নানান কথায় ভোলাচ্ছে, আর একটু-একটু করে গোঁজটিকে নাড়ছে। নাড়তে-নাড়তে এমন করেছে যে, এখন টানলেই সেটা খুলে যাবে, আর কাঠ বাঘের লেজ কামড়ে ধরবে। তখন সে ‘মামা, গেলুম।’ বলে সেই গোঁজসুদ্ধ মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিতে লাগল। আর বাঘের যে কি হল সে আর বলে কি হবে? কাঠ লেজে কামড়ে ধরতেই তো সে বেজায় চেঁচিয়ে এক লাফ দিল। সেই লাফে ফটাং করে লেজ ছিঁড়ে একেবারে দুইখান। তখন বাঘও শিয়ালের সঙ্গে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল। বাঘ বললে, ‘ভাগ্নে, গেলুম! আমার লেজ ছিঁড়ে গিয়েছে।’ শিয়াল বললে, ‘মামা, গেলুম! আমার কোমর ভেঙে গিয়েছে!’ এমনি করে দুজনে গড়াগড়ি দিয়ে এক কচুবনে ঢুকে শুয়ে রইল। বাঘ আর নড়তে চড়তে পারে না। কিন্তু শিয়াল বেটার কিছু হয়নি, সে আগাগোড়াই বাঘকে ফাঁকি দিচ্ছে। সেই কচুবনের ভিতরে ঢের ব্যাঙ ছিল, শিয়াল শুয়ে-শুয়ে তাই ধরে পেট ভরে খেল। বাঘ বেদনায় অস্থির, সে ব্যাঙ দেখতেই পেল না—খাবে কি! কিন্তু তার এমনি খিদে পেয়েছে যে, কিছু না খেলে সে মরেই যাবে! তখন সে শিয়ালকে জিগগেস করলে, ‘ভাগ্নে, তুমি কিছু খেয়েছ নাকি?’ শিয়াল বললে, ‘আর কি খাব? এই কচুই খেয়েছি। খেয়ে আমার পেট বড্ড ফেঁপেছে।’ বাঘও আর কি করে। সে কচুই চিবিয়ে খেতে লাগল। তারপর গলা ফুলে, মুখ ফুলে, সে যায় আর কি! তা দেখে শিয়াল বললে, ‘কি মামা, কিছু খেলে?’ বাঘ বললে, ‘খেয়েছি তো ভাগ্নে, কিন্তু বড্ড গলা ফুলেছে। তোমার তো পেট ফেঁপেছে, আমার কেন গলা ফুলল?’ শিয়াল বললে, ‘আমি কিনা শিয়াল, আর তুমি কিনা বাঘ, তাই।’ লেজের ব্যথায় আর গলার ব্যাথায় বাঘ ষোলোদিন উঠতে পারলে না। এই যোলোদিন কিছু না খেয়ে সে আধমরা হয়ে গিয়েছে। এমন সময় সে দেখলে যে, শিয়াল গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দিব্যি চলে যাচ্ছে। তাতে সে আশ্চর্য হয়ে জিগগেস করলে, ‘কি ভাগ্নে, তোমার অসুখ কি করে সারল?’ শিয়াল বললে, ‘মামা, একটি ভারী চমৎকার ওষুধ পেয়েছি। আমি আমার হাত পা চিবিয়ে খেলুম আর তক্ষুনি আমার অসুখ সেরে গেল। তারপর দেখতে দেখতে নতুন হাত পা হল।’ বাঘ বললে, ‘তাই নাকি? তবে আমাকে বলনি কেন?’ শিয়াল বললে, ‘তুমি কি আর তোমার হাত পা চিবিয়ে খেতে পারবে? তাই বলিনি।’ এ কথায় বাঘ ভীষণ রেগে বললে, ‘তুই শিয়াল হয়ে পারলি, আর আমি বাঘ হয়ে পারব না?’ শিয়াল বললে, ‘তুমি দুটো ঠাট্টার ভয়ে অমন বিয়েটা ছেড়ে এলে! এখন যে হাত পা চিবিয়ে খেতে পারবে তা আমি কি করে জানব?’ তখন বাঘ বললে, ‘পারি কি না, এই দেখ।’ বলে সে নিজের হাত পা চিবিয়ে খেল। তারপর তিন-চার দিনের মধ্যেই ভয়ানক ঘা হয়ে সে মারা গেল।

Related Posts

Categories #9

খবরাখবর(902)
ছোট গল্প(68)
শিক্ষামূলক গল্প(67)
গল্পকথার আসর(59)
ভৌতিক গল্প(57)
ইসলামিক গল্প(44)
কিশোর গল্প(32)
রম্য গল্প(21)
চটি গল্প(1)