Bangla24.Top
প্রকৃতি আসলে রহস্যময়। সে নানা রহস্যের আড়ালে নিজেকে ঢেকে রাখে। মানুষ কিছু রহস্যের সমাধান করতে পারলেও, কিছু রহস্য অজানাই থেকে যায়।
এই রহস্যগুলো বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়, কিন্তু এখনও এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
এমন এক প্রকৃতীর অজানা রহস্যের নাম হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। অনেকেই “ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল” বা “শয়তানের ত্রিভুজ” নামেও ডাকে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল হলো পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থানের মধ্যে একটি। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি ত্রিভুজ আকৃতির এলাকা, যার তিন কোণ হলো মিয়ামি (ফ্লোরিডা), বারমুডা দ্বীপ এবং পুয়ের্তো রিকো। এই ত্রিভুজকে অনেকেই “ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল” নামেও ডাকে, অর্থাৎ “শয়তানের ত্রিভুজ”। এই স্থানের নাম শুনলেই মানুষের মনে অনেক রহস্যময় এবং ভয়ানক গল্প ভেসে ওঠে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কেন এত রহস্যময়?
এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো এখানে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনা। অনেক জাহাজ হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে গেছে। বিমানও কখনও কখনও একেবারে নিখোঁজ হয়ে যায়। কেউ জানে না কেন। কখনও কখনও যাত্রী বা ক্রু হঠাৎ করেই চোখে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনার কারণে মানুষ বহু বছর ধরে ভাবছে যে এখানে কোনো রহস্যময় শক্তি কাজ করছে।
প্রথমবার মানুষ যখন এই স্থানকে “রহস্যময়” হিসেবে উল্লেখ করে, সেটা ছিল ১৯৫০ সালের দিকে। তখন এক দৈনিক পত্রিকায় লেখা হয়, কিছু জাহাজ এই স্থানে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর থেকে অনেক লেখক, গবেষক এবং সাংবাদিক এই স্থানের রহস্য নিয়ে গল্প লিখতে শুরু করে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যময় ঘটনা
১. বিস্ময়কর জাহাজের অদৃশ্যতা:
১৯৪৫ সালে, একটি বিখ্যাত ঘটনা ঘটে। পাঁচটি মার্কিন সামরিক বিমান “ফ্লাইট ১৯” নামের একটি অভিযানে বের হয়। হঠাৎ তাদের রেডিওতে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বিমানগুলো কোথায় গেছে, কেউ জানে না। পরবর্তী উদ্ধার দলও নিখোঁজ হয়ে যায়। এই ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে আরও রহস্যময় করে তোলে।
২. অদ্ভুত আবহাওয়া:
এখানে হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় বা তীব্র বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। কখনও কখনও সমুদ্রের তরঙ্গ খুব বড় হয়ে যায়। এই কারণগুলো অনেক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে।
৩. বিমান দুর্ঘটনা:
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের উপর দিয়ে অনেক বিমান উড়েছে। কখনও কখনও বিমান হঠাৎভাবে রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই কারণে অনেক বিজ্ঞানী গবেষণা করেছে। তারা দেখেছে, এখানে কখনও শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়, যা নেভিগেশন যন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিজ্ঞান কি বলে?
বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে এবং কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে। যেমন:
সমুদ্রের শক্তিশালী স্রোত: সমুদ্রের গভীরে কিছু অদ্ভুত স্রোত আছে, যা জাহাজ বা বিমানকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে পারে।
প্রাকৃতিক গ্যাস: সমুদ্রের তলায় মিথেন গ্যাস তৈরি হতে পারে। এই গ্যাস দ্রুত সমুদ্রের পানি থেকে বের হলে জাহাজ ডুবে যেতে পারে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন: হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়, শক্তিশালী ঝড় বা কুয়াশা অনেক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
তবে, অনেক বিজ্ঞানী বলেছেন যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের দুর্ঘটনার সংখ্যা অন্য সমুদ্র অঞ্চলের তুলনায় বেশি নয়। অর্থাৎ, রহস্য মানুষের কল্পনার কারণে বড় হয়ে গেছে।
কল্পনাময় ব্যাখ্যা
অনেক গল্পে বলা হয় যে এখানে ভিনগ্রহী বা অদৃশ্য শক্তি আছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে এই স্থানে সময় বা স্থান বিকৃত হয়। এইসব ধারণা সত্যি প্রমাণিত নয়, তবে ছোটদের কল্পনায় এটি অনেক মজা দেয়। অনেক শিশু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ভয়ঙ্কর কিন্তু রহস্যময় স্থান হিসেবে কল্পনা করতে ভালোবাসে।
ইসলাম কি বলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে
বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিতে কিছু ধারণা প্রচলিত আছে,
১। এখানে মসিহ-উদ-দজ্জ্বাল এর বাসস্থান
২। এটি খারাপ জ্বীনেদের বাসস্থান
৩। শয়তানের অবস্থান
১/ পৃথিবীর অনাবিষ্কৃত স্থানসমূহের মধ্যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল একটি। দাজ্জ্বালের সম্পর্কে হযরত তামিম দারির যে ঘটনাটি রয়েছে সেটার সাথে আমরা বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল কে তুলনা করেন তিনি সমূদ্রে হারিয়ে গিয়েছিলেন এবং একটি অচেনা দ্বিপে এসে পৌঁছেছিলেন, হতে পারে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল-ই সে দ্বীপ। যদিয়ও আরব থেকে অনেক দূরে এটি অবস্থিত ।
২/ আবার বারমুডা হয়তো কোনো খারাপ জ্বীনেদের বাসস্থান যারা শয়তানকে মেনে চলে, এজন্য সেখানে কোনো জাহাজ বা প্লেন প্রবেশ করলে তার চিহ্নটুকুও থাকেনা।
বিজ্ঞান এ বিষয়ে মিথেন বুদবুদ (Methane Bubbles) এর যে থিওরি দিয়েছে তা যদি সত্যি হতো তাহলে আর যাই হোক উড়ন্ত প্লেন আর জাহাজ এভাবে উধাও হয়ে যাওয়া অসম্ভব, তাই এ থিওরি মানা কষ্টকর।
তবে যাই হোক এটা আল্লাহর একটা রহস্যময় সৃষ্টি, আমরা শুধু ধারণাই করতে পারি, কিন্তু কেউই নিশ্চিত বলতে পারবোনা যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আসলে কি? কে আছে সেখানে
৩/ মেশকাতের ৭১ নাম্বার হাদিস উল্লেখ রয়েছে, নিশ্চয় শয়তানের অবস্থান হল সমুদ্রের মাঝে । (মুসলিম / মেশকাত )এই হাদিস অনুজায়ি বলা জেতে পারে শয়তানের অবস্থান হল সমুদ্রের মাঝে। এখান থেকে শয়তানি বুদ্ধি দিয়ে থাকে।
১৯৭৫ সালে এক গবেষক বহু বছরের সংবাদপত্র ও নথি বিশ্লেষণ করে দেখান যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে কেন্দ্র করে যত রহস্য প্রচলিত আছে, তার বেশিরভাগই অতিরঞ্জিত বা ভুলভাবে উপস্থাপিত। অনেক জাহাজ ও বিমানের “নিখোঁজ” ঘটনার পর প্রকৃত অবস্থান পাওয়া গেলেও গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়নি। কিছু ঘটনা বারমুডার বাইরে হলেও সেগুলোও ভুলভাবে এই এলাকার দুর্ঘটনা হিসেবে দেখানো হয়েছে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এটলেনটিক মহাসাগরে বিষুবীয় এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ার কারনে ভৌগোলিক ভাবেই এখানে নিয়মিত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এসব ঝড়ের সাথে দূর্ঘটনার তুলনা করলে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত বলে মনে হবে। এছাড়া কম্পাসের ভুল দেক নির্ণয়ের ব্যাপারটি হলো পৃথিবীর ভৌগোলিক মেরু ও চৌম্বকীয় মেরুরপার্থক্য থাকার কারণে বিভিন্ন স্থানে কম্পাসের বিশেষ ভিন্নতা দেখা দেয়। বারমুডা য় অবস্থান কালেও ভৌগোলিক মেরু ও চৌম্বকীয় মেরুরপার্থক্য থাকার কারণে কম্পাস সঠিক দিক নির্দেশ করতে পারে না।
কিছু কোম্পানি পুরোনো জাহাজ ডুবিয়ে বিমার টাকা আদায় করেছে—এমন অভিযোগও রয়েছে। বই, ম্যাগাজিন ও টিভি শোগুলোও রহস্যকে বাড়িয়ে প্রচার করে লাভবান হয়েছে।
মোটকথা, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলোর বেশিরভাগই গুজব বা ভ্রান্ত ব্যাখ্যা; বিজ্ঞান ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে আরও পরিষ্কার ও প্রমাণভিত্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে।