233
মোস্তফা কামালের ছেলেবেলা তার বাবার কর্মস্থল কুমিল্লা সেনানিবাসে কেটেছে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার চেয়ে সেনানিবাসে সেনাদের কুচকাওয়াজ, মার্চপাস্ট তাকে বেশি টানত। ১৯৬৭ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তার চাকরি চূড়ান্ত হয়।
১৯৭১ সালের প্রথম দিকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। তখন সারাদেশে যুদ্ধের বিভীষিকা ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগোতে থাকে। ১৮ এপ্রিল ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর মর্টার ও আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু করে। মেজর শাফায়াত জামিল ১১ নম্বর প্লাটুনকে দরুইন গ্রামে আগের প্লাটুনের সঙ্গে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। মোস্তফা কামালের সাহস ও কর্মতৎপরতা দেখে মেজর শাফায়াত জামিল তাকে যুদ্ধকালীন ল্যান্সনায়েকের দায়িত্ব প্রদান করেন।
আরও পড়ুন: বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন
১৮ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে শুরু হয় শত্রুর গোলাবর্ষণ। সেই সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। সাড়েনি ১১টার দিকে মোগরা বাজার ও গঙ্গাসাগরের শত্রু অবস্থান থেকে গুলি বর্ষিত হয়। ১২টার দিকে আসে পশ্চিম দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ। তীব্র আক্রমণে প্রতিরক্ষার সৈন্যরা বিহ্বল হয়ে পড়ে। কয়েকজন শহীদ হন। এমন পরিস্থিতিতে মোস্তফা কামাল মরিয়া হয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে তিনি এলএমজি থেকে অবিরাম গুলি ছুড়তে থাকেন।
তার ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি থামেননি। মোস্তফা কামালের নিখুঁত ফায়ারে ২০ থেকে ২৫ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয় এবং তাদের সম্মুখ গতি মন্থর হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মোস্তফার এলএমজির গুলি নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তিনি মারাত্মকভাবে জখম হন। তখন পাকিস্তান বাহিনীর সৈনিকরা তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দরুইন গ্রামে তার শাহাদাত স্থানের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।
মৃত্যুর সময় তিনি বাবা-মা, স্ত্রী, দেড় মাস বয়সী ছেলে, তিন বোন ও এক ভাই রেখে গিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে ২৪ বছর বয়সে তার ছেলে মোশারেফ বাচ্চু মারা যান। ২০০৬ সালে স্ত্রী পেয়ারা বেগম, ২০০৫ সালে বাবা হাবিবুর রহমান ও ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান তার মা মালেকা বেগম। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বীরশ্রেষ্ঠের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মারা যান। বর্তমানে তার দুই বোন এবং ছোট ভাইয়ের সন্তানরা জীবিত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের শাহাদৎবার্ষিকীতে মৌলভীবাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ভোলায় তার নামে স্মৃতি জাদুঘর, বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকার কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়েছে।
তবে বীরশ্রেষ্ঠের জন্মদিনে কোনো আয়োজন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। মোস্তফা কামালের ভাতিজা মো. সেলিম (লিটন) বলেন, ‘এবার চাচার জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়নি। সরকারি বা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে দিনটি স্মরণ না করায় আমরা ব্যথিত।’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা মাত্র তিন মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। তাই এ বছর মোস্তফা কামালের জন্মদিনের আলাদা কোনো আয়োজন করতে পারিনি। ভবিষ্যতে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হবে।’
জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান বলেন, ‘বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। তবে আলাদাভাবে জন্মদিন পালন করা হয়নি।’
বিজয় দিবসে সড়কে ঝরল ৭ প্রাণ
‘বর্তমান যে ফর্ম অবাক হওয়ার কিছু নেই’—নিলামে মোস্তাফিজের দাম নিয়ে মাশরাফী
অপরাধ দমনে এআই সংযুক্ত সিসিটিভি চালু করছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভাঙা বাড়িতে হাদি-ভাসানীর ছবি
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে লড়ার সুখবর দিয়ে মুক্তি পেল ‘রইদ’-এর ট্রেলার
হাদিকে গুলির পেছনে বিদেশি চক্র জড়িত, সন্দেহ রিজভীর